রিসাং ঝর্ণা আর হারানো চশমা
Posted on January 27, 2020 • 3 minutes • 471 words
সাজেক থেকে আসার দিন আমাদের দিনব্যাপী প্ল্যান ছিল এইরকম- রিসাং ঝর্ণা দেখবো, তারপর আলুটিলা গুহা, তারপর যাবো দুপুরে খেতে। মধ্যাহ্নভোজ সেরে শেষ স্থান আর রিল্যাক্স করার জায়গা হিসেবে হর্টিকালচার পার্ক ঘুরে দেখবো। সাজেক থেকে বের হলাম ১০ঃ১৫ তে। চেকপোস্ট, আর্মি এসকর্ট পেরিয়ে রিসাং ঝর্না পৌছতে আমাদের প্রায় দেড়টা বেজে গেল। রিসাং এ গিয়ে শুনি যে পানি নাকি নাই, খুবই কম।
গাড়ি থেকে নেমে হাফ প্যান্ট পড়ে, গলায় গামছা পেচিয়ে, টাকা পয়সা- মোবাইলফোন নিরাপদস্থানে রেখে একটা লাঠি হাতে নিয়ে নামা শুরু করলাম। ঝর্ণা আরো নিচে, হেটে অনেকদূর যেতে হয়- তারপর পাকা সিড়ির দেখা মেলে। ঝর্ণায় পৌছে মেজাজ গেল বিগড়ে, ঢালু একটা জায়গায় পানি অবিরামভাবে পড়ে চলেছে। সেখানে গিয়ে দাড়ায়ে ভেজার উপায় নেই। পা পিছলে পড়ার চান্স আছে।
মোবাইল, মানিব্যাগ অপূর্বর কাছে দিয়ে আমি আগে নামলাম ঝর্ণার একদম নিচে যেখানে পানি এসে জমেছে। নেমে গভীরতা মেপে দেখলাম। ততক্ষণে সবাই বলতেসে যে একটু আগে নাকি একটা লোক এখানে আছাড় খেয়ে পড়সে। আমাকে বলতেসে স্লিপ কেটে নামার জন্য।
ঝর্ণার পানি যে রাস্তা দিয়ে নিচে বয়ে গেছে, সেখানটা পিচ্ছিল হয়ে একদম নিচে নেমে গেসে, স্লিপিং স্লাইডের মত। আমার আর কী করার, টানা ১০ মিনিট ঝর্ণার পানিতে বসে ভিজে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করলাম- কিভাবে, কোথা দিয়ে নামবো। পিছন থেকে মানুষজন বলেই চলতেসে- স্লাইড দে, তাড়াতাড়ি দে
ইচ্ছা করেই চোখে চশমা লাগায় আমি নিজেকে ঠেলে দিলাম। চশমা পড়ার কারণ ছিল, নামার পথে চোখে যদি কিছু ক্লিয়ার না দেখি তাহলে ব্যাথা পাওয়ার চান্স খুব বেশি। রাস্তার প্রথম অর্ধেক ভালোমতই নেমে গেলাম, মাঝখানে এসে ঝর্ণার দুইটা ছোট স্রোত একত্রিত হয়েছে, সেখানে এসে আমার দেহ ১৮০° ঘুরে গেল। বুঝতে বাকি রইলো না যে, কৌণিক গতিবেগের কারণে পানিতে নামার আগেই আমার চোখ থেকে চশমা ছুটে গেল। আর সেটা বুঝতে পারার সাথে সাথেই আমি এসে পড়লাম পানিতে।
পানিতে পড়ার পর কোনো রিগ্রেট ছিল না- কারণ সাথে এক্সট্রা চশমা নিয়ে আসছিল, যেটা গাড়িতে ছিল। কিন্তু তবুও এরকম ছোট একটা কারণে চশমা হারাইলো, এটা মানতে পারলাম না। পানি ছিল।কোমড় পর্যন্ত, তাই পানির নিচে ডুব দিয়ে, হাত দিয়ে চশমা খোজা শুরু করলাম।
ইতোমধ্যে আমার ভাইয়েরা তীরে ভিড়লো- চশমা খোজা দেখতে। রিদি এসে আমাকে ওর চশমা দিল- যেন সেইটা পড়ে খুজি। আমি চশমাটা নিয়ে ঝর্ণার একদম নিচের দিকে পানিতে মারলাম, সিম্যুলেট করে যেন আমার নিজের চশমা খুজতে পারি, সেজন্য। একটা রাফ আইডিয়া দাড়া করানো গেল, আমি সেই অনুযায়ী খোজা শুরু করলাম।
খুজতেসি, খুজতেসি, প্রথম ১০ মিনিট কোনো আউটকাম পাইলাম না। কিছুক্ষণ পর পানির নিচে একটা সানগ্লাসের সন্ধান পাইলাম। কিন্ত দুধের সাধ কী আর ঘোলে মিটে ? সানগ্লাস পকেটে ভরে আবার খোজা শুরু করলাম
দুইটা গেঞ্জি, একটা আখের টুকরা পাওয়ার পর আরো একটা সানগ্লাস পাইলাম, সেটাও পকেটে ভরলাম। কিছুক্ষন পর আরোও একটা সানগ্লাস পাইলাম- এদিকে আমার মেজাজ গরম হচ্ছে, আমার কাজের জিনিস পাচ্ছি না, তিন তিনটা সানগ্লাস পেয়ে গেসি
শেষ বারের মত খুজতে লাগলাম, পা দিয়ে- অতি সন্তর্পণে। লাঠির টুকরার মত কী যেন একটা পায়ে লাগলো, তুলে দেখলাম একটা বাশের কঞ্চি। তার কিছুক্ষণ পর আরেকটা এরকম বস্তু ঠেকল পায়ে, তুলে দেখলাম এটা আর কিছুই না- আমার সেই হারানো চশমা