সিলেটি ফেরারী
Posted on October 8, 2021 • 10 minutes • 1935 words
Table of contents
২ অক্টোবর, ২০২১ • ঢাকা
ঘুম থেকে উঠেই গ্রুপে মেসেজ দিলাম, ট্যুরে যাবো না। রাতে ট্রেনের জার্নির কথা মনে করে বিছানা ছাড়তে মন চাচ্ছিলো না। দরকার কী এত কষ্ট করে ট্যুরে যাবার, এর চেয়ে বরং নিজের খাটে আরামে শুয়ে কাটায় দিবো। প্রায় দেড় বছর পর পরিচিত মানুষগুলোর সাথে দেখা হবে, এর জন্যে বোধ হয় প্রস্তুত ছিলাম না।
বিকালে নাসিফ আসলো, তার সাথে আড্ডা দিলাম, গ্রিল-লাচ্ছি-ফালুদা খেতে খেতে সন্ধ্যা ৭টা বেজে গেল। ব্যাগ আগে ভাগেই গুছিয়ে রেখেছিলাম, কাপড় পড়ে রেডি হয়ে রওনা দিলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। মন বিষণ্ণ ছিল, বাসা থেকে বিদায় নিতে কষ্ট হচ্ছিল, বাসা ছাড়তে মন চাচ্ছিল না কোনোমতেই। বেশ কম সময়ের ব্যবধানেই স্টেশনে পৌছে গেলাম, দেখি অনেকে দাড়িয়ে আছে। ওদের সাথে কিছুক্ষণ বাইরে দাড়িয়ে রইলাম, ভিতরে অনেকে আগেই ঢুকে দাড়িয়ে আছে- ওদের কল পাওয়া মাত্রই ভিতরে ঢুকে গেলাম। কিছুক্ষণ গড়িমসি করার পর ট্রেনে উঠে ব্যাগ রেখে আবার নিচে নেমে এলাম- কারণ রামিসা এখনও আসে নি।
ঘড়িতে বাজে ৮ঃ২৫ এর মত, ট্রেনের গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম ট্রেন ছাড়তে দেরী হবে কি না। উনি বললেন ট্রেন ঠিক টাইম মতই ছাড়বে। উনাকে কিছুক্ষণ বলার পর উনি বললেন একজনের জন্য সর্বোচ্চ এক মিনিট ওয়েট করা যাবে। এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট করে ৮ঃ৩১ বেজে গেল, গার্ড সিগন্যাল দেয়ার পর ট্রেন চলা শুরু করলো- রামিসার পৌছাবার কোনো ঠিকানা নেই। মাশিয়াতকে আগেই বলে রাখসিলাম ট্রেন চলা শুরু করলে চেইন টান দিতে, আমার মাথায় ধারণা ছিল- দরকার হলে জরিমানার টাকা দিয়ে গোসল করায় দিবো তাও কাওকে ছেড়ে যাবো না।
মাশিয়াত চেইন টান দিলো- কোনো কাজ হলো না। আমি নিজে একবার টান দিলাম- কাজ করলো না, আরেকবার টান দিলাম- তাও কাজ করলো না। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল- বাংলাদেশ রেলওয়ে কে মনে প্রাণে গালি দিয়ে ধুয়ে ফেললাম। তখনই মাশিয়াত বললো যে, রামিসা নাকি কোনোমতে ট্রেনে উঠতে পারসে- এক বগি পার হয়ে তাকে নিয়ে আসলাম।
৩ অক্টোবর, ২০২১ • লালাখাল, জাফলং
ভোর তখন ৫টা বাজে, সিলেটে ট্রেন পৌছে গেছে। ট্রেন থেকে আমরা আস্তে আস্তে নামলাম- দেখি চারিদিক অন্ধকার, আজান দিচ্ছে, হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আগে থেকেই আমরা লেগুনা এবং হোটেল ঠিক করে রেখেছিলাম। লেগুনার মান্নান মামাকে ফোন দিলাম- মামা বললেন আসতে ১০-১৫ মিনিট লাগবে। আমরা প্ল্যাটফর্মেই বসে কিছুক্ষণ গল্প করলাম, তারপর স্টেশন থেকে বের হবার প্রস্তুতি নিলাম- ততক্ষণে মামা লেগুনা নিয়ে স্টেশনে এসে পড়েছেন।
লেগুনায় চড়ে রওনা দিলাম আমাদের হোটেলের উদ্দেশ্যে। চেক-ইন টাইম দুপুর ১২টা হওয়া সত্ত্বেও আমাদের বিনা চার্জেই ৫টি রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন। আমরা যে যার রুমে ফ্রেশ হলাম, তখন অনেকেই ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমরা ক’জন গেলাম হোটেলের ছাদে। হোটেলের ছাদে বেশ কিছুক্ষণ গল্প-গুজব করলাম, সিলেট শহরটা দেখলাম, গ্রিক-নর্স মিথোলজি নিয়ে কিছুক্ষণ অগত্যা প্যাচাল পেড়ে নাস্তা খেতে নিচে নামলাম।
নাস্তা শেষ করে আমরা রওনা দিলাম আমাদের প্রথম স্পট হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর মাজারের উদ্দেশ্যে। সিলেটে আমার মাজার গুলো দেখার ইচ্ছে ছিল। থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পড়া ছিলাম, তাই উপরে লুঙ্গি পড়ে মাজার জিয়ারত করে আবার গাড়িতে উঠে চলা শুরু করলাম- এবার আমাদের গন্তব্য লালাখাল। লালাখাল পৌছে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলাম, নৌকা ঠিক করার জন্য। মামা দাম চাইলেন দুইটা নৌকা দিবেন- ৫৫০০ টাকা। দামাদামি করেও দাম পছন্দ না হওয়ায় কঠোর শব্দ ব্যবহার করে সবাইকে লেগুনায় উঠতে বললাম। তখনই নৌকার মামা রাজি হলেন ৩৫০০ টাকায়।
নৌকায় উঠতে যাবো, এমন সময় কে যেন বললো- “রাবিদ, এই নৌকা পাল্টায় ঐ নৌকাটা নে, এটা ভালো না"। আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম, বলে কি! যার নৌকা তার কানে এই কথা গেলে কেমন শোনাবে। নৌকায় সবাই উঠে প্রায় ২.৫ - ৩ ঘন্টা ধরে লালাখাল ঘুরলাম। লালাখাল ঘুরে আমরা ঘাটে ফিরলাম, আবার লেগুনা বসে পাড়ি দিলাম জাফলং-য়ের উদ্দেশ্যে। জাফলং পৌছে সবার পেটে ক্ষুধা লেগেছে, ঢুকলাম জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্টে- বেশ সুন্দর এবং ঝকঝকে। খাবার কার্য সেড়ে আমরা সিড়ি বেয়ে নামলাম নিচে, পথিমধ্যে সবার জন্য টিকিট এবং নৌকার ব্যবস্থা করে নিলাম। সাতাশ জনের জন্য লাগলো ৩৩০০ টাকা।
পাথর আর বালুর রাস্তা পেরিয়ে আমরা উঠলাম ডিঙি নৌকায়। নৌকায় করে মাঝি নিয়ে গেল ওপাড়ে, বেশি দূর নয় যেতে। ওখানে নৌকা থেকে নেমে আমরা হেটে চলা শুরু করলাম মায়াবী ঝর্ণার উদ্দেশ্যে। ছেলেরা ক’জন ঝর্ণায় ভিজবো- তাই এক জায়গায় দাড়িয়ে কাপড় পাল্টিয়ে নিলাম। ঝর্ণাটা বেশ প্রশস্ত, অনেকগুলো স্তরে ভাগ করা। একটু একটু করে ঝর্ণার উপরে উঠতে লাগলাম। একটা বেশ ভালো স্পট পেলাম, মানুষ তেমন নেই কিন্তু পানি বেশ ভালো আছে। সেখানে কিছুক্ষণ ভিজে আরেক সাইডে যাবো- তাই নিচে নামছিলাম। হঠাত দেখি পাথরের মাঝে একটা গর্ত, সেখানে একটা অক্ষত চশমার ফ্রেম পড়ে আছে পানির মধ্যে, কোনো লেন্স নেই। চশমার ফ্রেমটিকে আমার সিলেট ট্যুরের স্যুভেনির ভেবে নিয়ে নিলাম। মন ভরে ঝর্ণায় ভেজার পর আমরা একে একে নৌকার দিকে চলা শুরু করলাম। জাফলং ভিউ রেস্টুরেন্টে পৌছে কাপড় পাল্টালাম, কয়েকজন চা খেলাম। একে একে লেগুনায় করে আমরা সিলেট শহর ফেরা শুরু করলাম। আজকের ঘোরাফেরা এখানেই শেষ। হোটেলে পৌছে সবাই ফ্রেশ হয়ে একসাথে গেলাম পানশী রেস্টুরেন্টে, রাতের খাবার খেতে। ভাত, ভর্তা, মাংস, বিরিয়ানী যে যার ইচ্ছামত খেলাম।
৪ অক্টোবর, ২০২১ • রাতারগুল, সাদাপাথর
আসিফের এলার্ম এর ক্রিং ক্রিং শুনে বিরক্ত হয় ঘুম থেকে উঠলাম। আমি নিজেই কমপক্ষে তিনবার এলার্ম অফ করছি। উঠে আমার এলার্ম বন্ধ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হোটেলের ব্যুফে ব্রেকফাস্টে কী আছে- তা দেখার জন্য আগে আগে নিচে নেমে নাস্তা সেড়ে নিলাম। পাতলা করে ভাজা পরোটা, আলু-ফুলকপি বা পেপে দিয়ে সবজি মিক্স, সেদ্ধ ডিম-ভূনা, মুগের ডাল, ভুনা খিচুরী, হালুয়া, ট্যাং, চা-কফি ইত্যাদি। সকালে নাস্তা বেশি করি না- তাই আমার জন্য তা খুব বেশি মনে হলো। নাস্তা করে সবাই একটু রিল্যাক্স করলাম- লেগুনা আসার পর একে একে উঠে পড়লাম।
সিলেটে আবহাওয়া বেশ ভালো- খুব সকাল সকাল এবং রাতে বৃষ্টি হয়। আমরা যখন বের হই- তখন কোনো বৃষ্টি থাকে না, ঠান্ডা একটা পরিবেশ বিরাজ করে। ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগিয়ে আমাদের লেগুনা সকাল ৯.৩০ টার দিকে চলেছে রাতারগুলের উদ্দেশ্যে। রাতারগুল পৌছে টিকিট এবং নৌকা ভাড়া করে নিলাম। স্টুডেন্ট আইডি কার্ড থাকার কারণে টিকেটের হাফ ভাড়া দিতে হল- খরচ উঠলো ৫২৮০ টাকা। কেও কেও পাশের দোকান থেকে ছাতা ভাড়া করে নিল- এখানে নাকি প্রায়ই বৃষ্টি হয়ে থাকে।
বন-জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আমাদের নৌকা চলা শুরু করলো। মাঝে এক জায়গায় নামা লাগলো- পিচ্চি মাঝিটা নৌকা ধাক্কায় আরেক সাইডে নিয়ে যাবার পর আবার উঠে চলা শুরু করলাম। ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে নৌকা চলতে চলতে আমরা একসময় পৌছালাম ওয়াচ টাওয়ারের সামনে। নেমে কিছুক্ষণ ছবি তুলে আবার নৌকায় উঠে আমরা চললাম ফেরার উদ্দেশ্যে। ফেরার মাঝপথে শুরু হলো বৃষ্টি আশপাশে যার যা ছাতা ছিল, তা নিয়েই বসে রইলাম। ছাতা থাকা সত্ত্বেও অগত্যা ভিজতে হলো। নৌকা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে, কাপড় পাল্টিয়ে আমরা লেগুনায় উঠলাম, রওনা দিলাম সাদাপাথরের উদ্দেশ্যে।
সাদাপাথরে পৌছে আমরা উঠলাম খাবার হোটেলে। তেমন আহামরি কোনো দোকান না, খাবার কার্য সেড়ে নেয়া যায় মোটামুটি। খাবার আইটেম ভাত, ডাল, দুই প্রকার ভর্তা, মাংসের আইটেমে ছিল মুরগী, গরু, হাস, পানকৌড়ি পাখির মাংস, এবং মাছ। কোনো মতে খাবার সেরে নিলাম, কেও কেও আবার চা অর্ডার দিয়ে চা খেতে বসে গেল। কোথায় না সবাই আগে আগে রওনা দিবে, পানিতে ভিজবে- তা না করে সবাই ধীরে ধীরে চলছে। চা পান শেষ করে এক এক করে সবাই নিচে নামলাম, নৌকায় উঠলাম। তিনটা নৌকা আগে থেকেই ফিক্স করে রেখেছিলাম- জনপ্রতি ১০০ করে সর্বমোট লাগলো ২৮০০। নৌকা আমাদের সাদাপাথর স্পটে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল, বললো যেন আসার ২০-৩০ মিনিট আগে ফোন দিই।
সাদাপাথরের প্ল্যান ছিল যে, কমবেশি সবাই গোসল করবো। মেয়েদের জন্য আলাদা কাপড় পাল্টানোর স্থান থাকায় কারও কোনো সমস্যা হয় নি। পাথরের বিশাল একটা মাঠের উপর দাড়িয়ে আছে অনেকগুলা স্টলের মত। সেখানে কেও কেও লাগিয়ে রেখেছে লকারের ব্যবস্থা। ১০০ টাকা পার লকার দামে তিনটে লকার ভাড়া করে নিলাম আমরা। ব্যাগ এবং জিনিসপত্র লকারে রেখে চাবি রাখা হলো শারজিলের কাছে- সে ভিজবে না। সাদাপাথরে মানুষ এবং পানির স্রোত দুই-ই ছিল বেশ, কিন্তু পানির তাপমাত্রা হিমশীতল। পানির গভীরে যেতেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, প্রথমে পায়ে হেটে, তারপর বসে বসে সামনে আগানো লাগে। বেশিদূর না গিয়ে হালকা গভীরতার পানির মধ্যেই আমরা নামলাম, পা মুড়ে বসে রইলাম, ডুব দিলাম। কেও কেও শুধু মুখ পানির নিচে ডুবিয়ে ভাবলো যেন পুরো মাথা ডুব দেয়া হয়ে গেছে। ঠিক উঠপাখির মত- মাথা মাটির নিচে ঢুকালে ভাবে কেও তাকে দেখতে পায় না।
সাদাপাথরে ভেজা শেষ হলে সবাই শরীর শুকিয়ে, জামা-কাপড় পড়লাম। নৌকার মাঝিকে ফোন দেয়ার আরো আগেই মাঝি নিজেই ফোন দিয়ে হাজির। মাঝি আসলো, আমাদের নৌকায় তুললো, এবং স্রোতের মধ্যে দিয়ে আমাদের ফেরত নিয়ে গেল আগের জায়গায়। বেলা তখনো বাকি- কিন্তু আজকের মত ঘোরা শেষ, এখন ফিরে যাবো শহরে।
শহরে পৌছাতে আগেরদিনের মত বেশি সময় লাগলো না, বেশি সময় নষ্ট না করে আমি রুম থেকে নেমে, লুঙ্গি পড়ে রাস্তায় বের হলাম- বিদেশে ফ্যামিলি ট্যুরে আব্বু যেরকম করে, ঠিক তেমন। হোটেলের আশপাশে নাস্তার দোকান খুজছিলাম- পানিতে ভেজার কারণে ক্ষুধা বেড়ে গিয়েছিল। দেখলাম রাস্তার ওপাড়ে একটা দোকানে আলুচপ, বেগুনী, পেয়াজু ভাজছে। সুন্দর দেখায় আলুচপ ও কিছু পেয়াজু কিনে চলে আসলাম রুমে। রুমে ফিরে খেয়ে একটু আড্ডা দিয়ে আমি, তাহমীদ, আসিফ আর শারজীল বের হলাম আশপাশ ঘুরে দেখার জন্য। গতদিন রাত হয়ে যাওয়ায় ঘোরার সময় হয়ে ওঠেনি।
হোটেলের ডাকদিকের রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে আমরা পৌছালাম দরগা-গেটে। হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর মাজারে ঢুকে দেখলাম মাজারের গেট নামাজের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিক দিয়ে গেলে গেট একটু ফাকা পাওয়া যায়, মাজারটা দেখা যায়। মাজার জিয়ারত করে বের হয়ে এলাম বাকিদের সাথে। কিছুক্ষণ পর বাকিরা ফোন দিয়ে এসে জানালো তারাও আসছে এখানে, চা-পাতা কিনতে। একটা দোকানে ঢুকে কম-বেশি চা পাতা কিনলো। আমি নিলাম লেমন-গ্রাস টি আর দুই বয়াম সাতকড়ার আচার। সাতকড়া আগে কখনো খাইনি- টেস্ট কেমন হবে তা নিয়ে আমার কোনো জ্ঞান ছিল না। ঢাকায় এসে ভাতের সাথে খেয়ে দেখেছি, জীবনে আর কোনোদিন খাবো না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
৫ অক্টোবর, ২০২১ • বিছানাকান্দি, চা-বাগান
গতকাল রাতে বেশ অনেক্ষণ জাগনা থাকার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছে। সময় নিয়ে ফ্রেশ হলাম, ব্যাগ গুছালাম, এবং প্রস্তুত হয়ে নিচে নামলাম। একটু পরই হোটেল ছেড়ে দিবো, হোটেলের রিসিপশনে গিয়ে পেমেন্ট ক্লিয়ার করে সবাইকে লেগুনায় উঠতে বললাম। হোটেলের মান খুবই ভালো ছিল, স্টাফরাও খুবই অমায়িক ছিলেন। ঢাকায় এসে খুশি হয়ে Trip Advisor এ তাদেরকে খুব ভালো রেটিং দিয়েছি।
লেগুনায় করে আমরা চললাম চা-বাগানের উদ্দেশ্যে। সিলেট শহর থেকে বের হয়ে কাছেই একটি চা-বাগানে নামানো হলো। ভেবে রাখসিলাম চা-বাগানে খুব করে হলেও ২০-৩০ মিনিট থাকবো, দেখা গেল ছবি তুলে, ভিডিও করে প্রায় ৪০-৫০ মিনিট পার করে দিয়েছি। না চাওয়া সত্ত্বেও চা-বাগানের রাজ্য ছাড়তে হলো আমাদের; কারণ, বিছানাকান্দি আরো দূর এবং রাস্তা ভীষণ খারাপ।
ভাঙ্গাচোড়া রাস্তায় দিয়ে হেলতে দুলতে আবার কখনোও ঝাকি খেয়ে পৌছালাম বিছানাকান্দিতে। ঘাটে পৌছে কিছুক্ষণ সময় নিলাম ঠিক হতে, শরীরের ম্যাজ-ম্যাজ ব্যাথা দূর করার পর নৌকা ঠিক করা হলো। অনেক দামাদামির পর দুটা নৌকা ভাড়া করা হলো ৪০০০ টাকায়। নৌকায় উঠে নদীর মধ্যে দিয়ে আমাদের নৌকা চলা শুরু করলো আমাদের ট্যুরের শেষ গন্তব্য- বিছানাকান্দির উদ্দেশ্যে। আশপাশের দৃশ্য সাদাপাথর, লালাখাল এবং জাফলং এর চেয়েও কয়েকগুণ সুন্দর ছিল।
বিছানাকান্দি পৌছে মনে হল- এর সামনে সাদাপাথর কিছুই না। পাথরের ওপর বালুর আস্তর, তার ওপর বসে আছে ঘোটা এক বাজার। বাজারে রয়েছে ভারতীয় চকলেট, বিস্কুট, সাবান ইত্যাদি। শীলং বর্ডার থেকে চোরাইভাবে এসব এখানে আনা হয়, কম দামে বিক্রি করা হয়। বাজারের আরেক প্রান্তে আছে খাবারের হোটেল, যাবার সময় একটা হোটেলে আগে থেকে বলে গেলাম যেন ফোন দিলে খাবার রান্না করে- ভাত, ডাল, আলু ভর্তা, সবজি, দেশী মুরগীর মাংস।
বিছানাকান্দিতে আমার ভেজার ইচ্ছা ছিল না, তাই আলদা জামা-কাপড় আনি নি। অন্যদের দেখাদেখি আমিও শেষমেষ ভিজতে লেগে গেলাম। পানি ছিল বেশ পরিষ্কার, পাথরগুলো সুন্দর- সাদাপাথরের মত বেশি কষ্ট পোহাতে হয় নি কারোরই। শেষ বিকেলে পানিতে ভিজে, চোখের জল-নাকের জল এক করে উঠলাম, ভাবতে লাগলাম কিভাবে এত তাড়াতাড়ি দুইদিন শেষ হয়ে গেল। খাবার হোটেলে ভাত খেলাম- খেয়ে দুইটি জিনিস মনে হল। এক, চেষ্টা করলে এদের চেয়ে আমি ভালো মুরগী রান্না করতে পারবো এবং দুই, আমি মুরগী রান্না করতে পারি না। খাবার শেষ করে বাজারে গেলাম, কিছু বিস্কুট চকলেট কিনলাম- কিনে নৌকায় উঠার জন্য রওনা হলাম।
নৌকায় উঠছি- মানুষজন নৌকার সামনে দাড়িয়ে আছে, ঢুকতেছে না, এমন সময় এসে এক বৃহন্নলা ধরলো। কারোর দিকে খেয়াল না করে উষ্ণ বাক্য ছাড়লাম, হাতে টাকা ধরিয়ে বৃহন্নলাকে বিদায় করলাম। শেষ দিনের, শেষ বিকেলের ক্লান্তি ভর করে বসেছে- নৌকা করে ফিরে যেতে লাগলাম আমাদের লেগুনার উদ্দেশ্যে। ফেরার পথে বার বার মনের মধ্যে ফারহান আক্তারের কন্ঠ ভাসছিল।
সেদিন রাতে পূর্বাশা তার বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ালো- আন্টির যা আয়োজন তাতে ইচ্ছা করছিলো আরো খাওয়ার। রাতের ট্রেনে ঢাকা ফেরত যাবো বলে আর বেশি খাওয়া হয়ে উঠলো না। পূর্বাশা আর আংকেল এসেছিলেন আমাদের স্টেশনে নামিয়ে দিতে। স্টেশন যেতে যেতে আমার আগের এক অনুভুতির কথা মনে পড়ে গেল। বাসা থেকে যেদিন স্টেশনে যাচ্ছিলাম- সেদিনের কথা, কেরকম একটা প্যালিনড্রোম।
Image courtesy: Shafayat, Nasif